সুন্নী ইসলামে মাহ্দি
মাহ্‌দি বিষয়ক হাদিসের ব্যাখ্যা

بسم الله الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময়, পরম দয়াময় আল্লাহ্ -এর নামে


وَعَدَ اللهُ الَّذينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَ عَمِلُوا الصّالحاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ في الاَرْضِ كَما اسْتَخْلَفَ الَّذينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَ لَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دينَهُمُ الِّذي ارْتَضي لَهُمْ وَ لَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ اَمْناً يَعْبُدُونَني لا يُشْرِكُونَ بي شَيْئاً وَ مَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذلِكَ فَاٌولئِكَ هُمُ الْفاسِقُونَ (النور – 55)

“তোমাদের মধ্যে যারা তাঁকে বিশ্বাস করেছে এবং ন্যায়নিষ্ঠ কাজ করেছে, আল্লাহ্ তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি অবশ্যই পৃথিবীতে তাদের [প্রাধাণ্যের] উত্তরাধিকার দেবেন, ঠিক যেভাবে তিনি তাদের পূর্বসুরীদের দিয়েছেন এবং তিনি তাদের জন্য যে ধর্ম নির্দিষ্ট করেছেন তা তিনি [সেখানে] নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠা করবেন এবং তিনি অবশ্যই তাদের সব ভয় দূর করে সুরক্ষা প্রদান করবেন, [কারণ] তারা আমার সঙ্গে কোনোকিছুকে যুক্ত না করে শুধুমাত্র আমার উপাসনা করে। আর যারা অবিশ্বাসী তারা অবশ্যই অবাধ্য।”

সুরাহ্- আন- নূর (24) স্তবক 55 তে আল্লাহ্ তাঁর ধর্মনিষ্ঠ বিশ্বাসীদের বিষদভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারাই অবশেষে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ইসলাম বিস্তৃতি লাভ করবে এবং ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার স্থানে শান্তি ও সুরক্ষা বিরাজ করবে। নাস্তিকতা পৃথিবীর বুক থেকে মুছে যাবে এবং আল্লাহ্- এ বিশ্বাসীরা স্বাধীনভাবে অদ্বিতীয় আল্লাহ্- এর উপাসনা করতে থাকবে। আর মানবজাতির উদ্দেশ্যে সাবধানবাণী শোনানো হয়েছে যে যারা তাঁকে অবিশ্বাস করার সিদ্ধান্ত নেবে তারা দোষী পাপী বিবেচিত হবে।

তাছাড়া, পবিত্র কোরাণে বলা হয়েছে যে:

وَ لَقَدْ كَتَبْنا فِي الزَّبُورِ مِنْ بَعْدِ الذِّكْرِ أَنّ الارْضَ يَرِثُها عِباديَ الصّالِحُونَ (الانبیاء – 105)

“এবং আমরা ধর্মীয় নথিতে (জাবূর = সাল্ম্) লিখেছি, (মোজেসকে দেওয়া) বাণী অনুযায়ী, আমার ধার্মিক সেবকরা পৃথিবীর উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হবে।”

সুরাহ্ আনবীয়া (21) স্তবক 105 এ একটি সুনির্দিষ্ট দৈব প্রতিশ্রুতি ঘোষিত হয়েছে যার অনুসারে ধার্মিক মানুষরাই পৃথিবীর উত্তরাধিকার ও প্রভুত্ব লাভ করবে। এই স্তবকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে এমন একটি সময় আসবে যখন আল্লাহ্-এর যোগ্য সেবকরাই পৃথিবী ও তার সব মহাদেশ, অঞ্চল, এবং খনি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করবে। পবিত্র কোরাণের অন্যান্য স্তবকেও একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যেমন সুরাহ্ আল-কাসাস (28) স্তবক 5:

وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ (القصص – 5)

“এবং আমাদের ইচ্ছা পৃথিবীর সকল দরিদ্র ও হতভাগ্য মানুষের উপর করুণা করা এবং তাদের পৃথিবীর প্রভু ও উত্তরাধিকারী করে তোলা।”

বলা যেতে পারে যে পৃথিবীর মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ দৈব প্রতিশ্রুতিগুলির অনেকটাই হজরত মহম্মদের (সা।) সময় ও তার পরবর্তীকালে বাস্তবায়িত হয়েছে। তাছাড়া, ইসলাম, যা একসময় শ্ত্রু পরিবেষ্টিত ছিল যারা তার এতটুকুও প্রকাশ ঘটতে দেয়নি, আর মুসলমানেরা ভীত হয়ে বাঁচত, সেই ধর্ম অবশেষে শুধুমাত্র আরব উপদ্বীপই নয় বরং সারা পৃথিবীর অনেকাংশ অধিগ্রহণ করেছে এবং সকল স্তরে শত্রুদের পরাস্ত করেছে।

যদিও, পৃথিবীব্যাপী ইসলাম শাসন, যা নাস্তিকতা ও পৌত্তলিকতাকে নির্মূল করবে, এবং সুরক্ষা, শান্তি, স্বাধীনতা ও বিশুদ্ধ একেশ্বরবাদের বিস্তার ঘটাবে, তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। সেই কারণে, এই লক্ষ্যটির বাস্তবায়ন আশা করা যায়, এবং বিভিন্ন বিবরণ অনুসারে “মাহ্দির” উত্থানের মাধ্যমেই সেই শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।

পয়গম্বর মহম্মদের (সা।) অনেক সঙ্গীই মাহ্দির বিষয়ে হাদিসের বর্ণনা করেছেন। বহু সুপরিচিত ইসলাম ধর্মীয় বইতে এবং ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন শাখায় (শিয়া ও সুন্নী সহ) পয়গম্বর মহম্মদের (সা।) হাদিস লিখিত বিভিন্ন বইতে মাহ্দির উত্থান সম্পর্কিত পয়গম্বর মহম্মদের (সা।) বাণী ও তাঁর বাণীর ভিত্তিতে করা তাঁর সঙ্গীসাথীদের বাণী (যাঁদের সাক্ষ্যকেই হাদিস বলে মানা হয়) উদ্ধৃত রয়েছে। কিছু কিছু ইসলাম ধর্মজ্ঞানীরা মাহ্দির বিষয়ে বিশেষ বই লিখেছেন, এবং কিছু প্রাচীন ও আধুনিক বিজ্ঞানীরাও তাঁদের বইতে দাবী করেছেন যে মাহ্দি বিষয়ক হাদিস প্রায়শই দেখা যায় এবং তা অনস্বীকার্য।

সিহা সিত্তা (বা ছটি প্রামাণ্য বই) হল সবথেকে প্রামাণ্য সুন্নী বই, যা পবিত্র কোরাণের পরে সুন্নীদের কাছে দ্বিতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থ। নিম্নলিখিত এই ছটি বই সুন্নী জ্ঞানীরা পাঠ ও ব্যবহার করে থাকেন :

  • সহি বুখারী
  • সহি মুসলিম
  • সুনান আবু দাউদ
  • সুনান আল-তিরমিধি
  • সুনান আল-নাসাই
  • সুনান ইব্ন মাজাহ্

সিহা সিত্তায় মাহ্দি তত্ত্ব বিষয়ক হাদিসের দুটি শ্রেণী অন্তর্ভুক্ত আছে: প্রথম শ্রেণীর হাদিসে মাহ্দি তত্ত্বের ধারণা হাদিস থেকেই অনুধাবন করা হয়েছে, অন্যদিকে হাদিসের দ্বিতীয় অংশে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে শুধুমাত্র মাহ্দিকে কেন্দ্র করে কিছু বিশেষ হাদিস। এই ব্যাখ্যাটিতে আমরা প্রথমে প্রামাণ্য ছটি বইয়ের হাদিস আলোচনা করব যেখানে মাহ্দির বিষয়ে সাধারণভাবে উল্লেখ করা আছে এবং তারপরে বিশেষভাবে মাহ্দির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত হাদিসগুলি আলোচনা করব।

সিহা সিত্তায় মাহ্দি তত্ত্ব বিষয়ক সাধারণ হাদিস
হাদিস আল- থাকালাইন

“হাদিস আল-থাকালাইন”, যা হাদিসের সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য বইগুলিতে উল্লিখিত আছে, হল একটি অন্যতম হাদিস যাকে ইসলামের সকল গোষ্ঠীই মান্য করে থাকে। পয়গম্বর মহম্মদের (সা।) প্রায় 43 জন সঙ্গী এর বিবরণ দিয়েছেন এবং ইতিহাসের বেশীরভাগ বইতে এর উল্লেখ আছে। বিবরণগুলির অর্থে সামান্য পার্থক্য থাকলেও, এর মূল বক্তব্য হল পয়গম্বরের ইচ্ছা ও জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ, যা তাদের বিভ্রান্ত না হয়ে দুটি মূল্যবান দ্রব্য (আল-থাকালাইন) আঁকড়ে থাকতে উৎসাহিত করে।

হাদিসের পাঠ:

  • মুসলিম, তাঁর সহিতে জায়েদ ইব্ন আরকামের নিম্নোক্ত বাণীটি উল্লেখ করেছেন:

    قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فِينَا خَطِيبًا بِمَاءٍ يُدْعَى خُمًّا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَحَمِدَ اللَّهَ وَ أَثْنَى عَلَيْهِ و وَعَظَ و ذَكَّرَ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ و أَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللَّهِ فِيهِ الْهُدَى و النُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللَّهِ وَ اسْتَمْسِكُوا بِهِ فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ وَ رَغَّبَ فِيهِ ثُمَّ قَالَ و أَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمْ اللَّهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمْ اللَّهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمْ اللَّهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي

    (صحيح مسلم الحديث رقم 2408)

    একদিন আল্লাহ্ -এর দূত (সা।) মক্কা ও মদিনার মাঝে অবস্থিত “খুম” নামক একটি জলকুন্ডের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে একটি ধর্মোপদেশ প্রদান করেন। আল্লাহ্ তালার প্রশংসা করে, উপদেশ ও স্মরণবাণী শোনানোর পর তিনি বলেন: “হে জনতা! আমি একজন সাধারণ মানুষ ছাড়া কেউ না এবং আমার আত্মাকে নিয়ে যাবার জন্য দৈব দূতের আসার সময় হয়েছে এবং আমি তাঁর আমন্ত্রণ স্বীকার করব। আমি তোমাদের জন্য দুটি মূল্যবান দ্রব্য রেখে যাচ্ছি। প্রথমটি হল আল্লাহ্- এর বই, যা তোমরা মেনে চলবে।” তারপর তিনি আল্লাহ্- এর সেই বইয়ের বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেন এবং এতে বর্ণিত আদেশ পালন করতে সকলকে উৎসাহিত করেন। এরপর তিনি বলেন: “আর আমার আহ্ল আল-বায়াত (আমার পরিবার)! আমার আহ্ল আল-বায়াতের অধিকারগুলি আমি তোমাদের মনে করিয়ে দিতে চাই।” এই শেষ বাক্যটি তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেন।

  • তাঁর নিজের প্রমাণের ভিত্তিতে তিরমিধি, আল্লহ্- এর পয়গম্বরের (সা।) নিম্নোক্ত বাণীটি উল্লেখ করেন:

    إِنِّي تَارِكٌ فِيكُمْ مَا إِنْ تَمَسَّكْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا بَعْدِي أَحَدُهُمَا أَعْظَمُ مِنْ الْآخَرِ كِتَابُ اللَّهِ حَبْلٌ مَمْدُودٌ مِنْ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ وَعِتْرَتِي أَهْلُ بَيْتِي وَلَنْ يَتَفَرَّقَا حَتَّى يَرِدَا عَلَيَّ الْحَوْضَ فَانْظُرُوا كَيْفَ تَخْلُفُونِي فِيهِمَا

    (سنن الترمذي الحديث رقم 3788)

    আমি দুটি দ্রব্য তোমাদের কাছে ছেড়ে যাচ্ছি যাতে তোমরা তাদের মেনে চল এবং বিভ্রান্ত না হও। এর একটি অন্যটির থেকে মহত্ত্বর; সেটি হল আল্লাহ্ -এর বই, যা হল আকাশ থেকে ঝোলানো একটি দড়ির মত এবং দ্বিতীয়টি হল আমার আহ্ল আল-বায়াত। এই দুটি মূল্যবান দ্রব্য হল অবিচ্ছেদ্দ্য এবং এগুলি আমার সঙ্গে সরোবরে যুক্ত হবে (স্বর্গে)। আমার বিশ্বাসের প্রতি তোমাদের আচরণে তোমরা যত্নবান হবে।

হাদিস আল-থাকালাইন থেকে অনুধাবিত তথ্য

  • পয়গম্বরের কাছে সবথেকে মূল্যবান ছিল আল্লাহ্-এর বই এবং তাঁর আহ্ল আল-বায়াত (পরিজন)। আরবী ভাষায় “থাকালাইন” শব্দটি মূল “থাকাল” শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ হল “বিধিব্যবস্থা” অথবা যেকোনো মূল্যবান বস্তু যার সুরক্ষা ও যত্ন প্রয়োজন। তিনি আল্লাহ্-এর বই ও নিজের পরিবারকে “থাকালাইন” বলে উল্লেখ করেছেন তাদের স্থান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে।
  • আল্লাহ্-এর বই এবং পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াতের আলোকে মার্গদর্শন, মুক্তি ও সম্মানলাভ হয়। তিরমিধি অনুসারে পয়গম্বর (সা।) বলেছেন: “তোমরা যদি এই দুটি দ্রব্যকে মান্য করে চল তবে কখনো বিভ্রান্ত হবে না।”
  • পয়গম্বর (সা।) বলেছিলেন: “যতদিন না তারা আমার সঙ্গে সরোবরে যুক্ত হয় (স্বর্গে)” এবং “তোমরা দেখো তোমরা কিভাবে আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবে।” এই দুটি বাক্যাংশ থেকে বোঝা যায় মানুষের দিকনির্দেশ এই দুটি দ্রব্যের প্রতি তাদের মান্যতার উপর নির্ভরশীল, এবং শুধুমাত্র কোরাণ অনুসরণ করা আর পয়গম্বরের বংশধর ও আহ্ল আল-বায়াতকে উপেক্ষা করা অসম্ভব।
  • সুনান আল-তিরমিধি অনুসারে, পয়গম্বর (সা।) বলেছেন: “এই দুটি দ্রব্যকে কখনোই একে অপরের থেকে পৃথক করা যাবে না যতদিন না তারা আমার সঙ্গে সরোবরে (স্বর্গে) যোগ দেয়। ” এই বিবৃতির অর্থ হল কোরাণ এবং পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াত শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। তাই আমরা যদি এমন একটি সময় কল্পনা করার চেষ্টা করি যখন কোরাণ রয়েছে কিন্তু পয়গম্বরের পরিজনদের অস্তিত্ব নেই, তাহলে আমরা তাদের বিচ্ছেদ কল্পনা করে নিচ্ছি। কিন্তু, যতদিন পবিত্র কোরাণ আমাদের মধ্যে রয়েছে ততদিন পয়গম্বরের পরিবার ও আহ্ল আল-বায়াতও আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে।
  • এই বাণীতে পয়গম্বরের আরেকটি বার্তা ছিল “তোমরা আমার ছেড়ে যাওয়া এই দুই উত্তরসূরীর প্রতি তোমাদের আচরণে যত্নবান হবে।” এটি সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বক্তব্য, যেখানে পয়গম্বর (সা।) কোরাণ এবং তাঁর আহ্ল আল-বায়াতকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হিসাবে ও তাঁর উত্তরসূরী হিসাবে পরিচিতি দিয়েছেন।
  • হাদিস আল-থাকালাইন থেকে অনুধাবিত সবথেকে গুরত্বপূর্ণ বার্তাটি হল পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াতের পবিত্রতা ও ভ্রমহীনতা। এই বক্তব্যের সপক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হল পয়গম্বরের (সা।) দ্বারা কোরাণের পাশাপাশি আহ্ল আল-বায়াতের উল্লেখ। কোরাণ নিঃসন্দেহে হল সেই বই যাতে কোনো ভুল বা নিরর্থকতা নেই, আর তাই এর বিরোধিতা করা নিষিদ্ধ। পয়গম্বর মহম্মদ (সা।) এই কোরাণের পাশাপাশি তাঁর আহ্ল আল-বায়াতের উল্লেখ করেছেন এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তাদের অবিচ্ছেদ্দ্য বন্ধনের কথা বলছেন। এই দুটি মূল্যবান বস্তুকে তিনি সম্পূর্ণ জাতির পথপ্রদর্শক হিসাবে পরিচিতি দিয়েছেন এবং বলেছেন এই দুইয়ের প্রতি মান্যতার অভাব বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। তাই, এই বক্তব্যগুলি এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তুর সমতা বিধান করে, যা তাঁর পরিজনদের পবিত্রতারই পরিচায়ক। পয়গম্বরের বাণী, “এই দুটি কখনোই পৃথক হবে না”, তার সূক্ষ্ম বিচার করলে বোঝা যায় যে পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াত এবং কোরাণের মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই। অর্থাৎ আহ্ল আল-বায়াত কোরানের বাণী ও শিক্ষা মেনে চলে। আহ্ল আল-বায়াতের পবিত্রতা ও তাদের পাপ প্রতিরোধের ক্ষমতা ছাড়া এই বক্তব্যের আর অন্য কোনো অর্থ থাকা সম্ভব কি?

হাদিস আল-থাকালাইনে পয়গম্বরের পরিবার এবং আহ্ল আল-বায়াত

এবার আমরা পয়গম্বরের পরিবার এবং আহ্ল আল-বায়াতের অর্থ অনুসন্ধান করব, যাদের এই হাদিসে পয়গম্বর কোরাণের সমতুল্য বিবেচনা করেছেন। পরিশুদ্ধি বিষয়ক স্তবকের ব্যাখ্যাতেও এই একই প্রশ্ন উল্লিখিত হয়েছে (انما یرید الله لیذهب عنکم الرجس اهل البیت و یطهرکم تطهیراً; সুরাহ্ আহ্জাবের স্তবক 33 এর অংশ)। এই স্তবকে বর্ণিত আহ্ল আল-বায়াত কারা যাদের সহজাত পবিত্রতা এবং অন্তর্নিহিত শুদ্ধতাকে আল্লাহ্ অনুমোদন করেছেন?

পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াত কারা?

সুন্নীদের মধ্যে নানা মতামত প্রচলিত আছে, যার মধ্যে নীচে বর্ণিত দৃষ্টিভঙ্গিগুলি হল সবথেকে বেশী বিখ্যাত:

  • কেউ কেউ বিশ্বাস করেন পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াত হলেন তাঁর স্ত্রীরা।
  • কেউ বিশ্বাস করেন আহ্ল আল-বায়াত হলেন পয়গম্বরের স্ত্রীরা এবং সকল বানু হাশিমের সদস্যরা যাদের কোনো দান গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। এক্ষেত্রে আহ্ল আল-বায়াতের মধ্যে পড়ে আলির পরিবার, আকিলের পরিবার, জাফারের পরিবার এবং আব্বাসের পরিবার।
  • আহ্ল আল-বায়াত হলেন পয়গম্বর মহম্মদ (সা।), আলি (পয়গম্বরের জামাতা এবং সম্পর্কে ভাই), ফাতিমা (পয়গম্বরের কন্যা ও আলির স্ত্রী), এবং হাসান ও হুসেন (আলি ও ফাতিমার দুই সন্তান যারা পয়গম্বর মহম্মদের পৌত্র)।

হাদিসের সঠিক অর্থ অনুধাবনের জন্য পয়গম্বরের বাণীর অধ্যয়ন প্রয়োজন যাতে বোঝা যায় যে তিনি কোথাও কোনো উদাহরণের মাধ্যমে তাঁর আহ্ল আল-বায়াতের পরিচয় দিয়েছেন কি না। সৌভাগ্যক্রমে, সহি মুসলিম ও সহি আল-তিরমিধিতে এমন অনেক হাদিস রয়েছে যেখানে পয়গম্বর মহম্মদ (সা।) মৌখিক ও ব্যবহারিকভাবে তাঁর আহ্ল আল-বায়াতের পরিচয় দিয়েছেন।

  • সহি মুসলিম বইতে পয়গম্বরের স্ত্রী আয়েষার বাণী উল্লেখ করে বলা আছে:

    خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةً وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُرَحَّلٌ مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ فَجَاءَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَدَخَلَ مَعَهُ ثُمَّ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَأَدْخَلَهَا ثُمَّ جَاءَ عَلِيٌّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ قَالَ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمْ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

    (صحيح مسلم الحديث رقم 2424)

    আল্লাহ্-এর দূত সকালে একটি কালো চুলের তৈরী নকশা করা চাদর গায়ে দিয়ে বাড়ীর বাইরে গেলেন। হাসান ইব্ন আলি এলেন এবং পয়গম্বর তাঁকে তাঁর চাদরের মধ্যে টেনে নিলেন। তারপর হুসেন এলেন এবং তিনি তাঁকেও তাঁর চাদরের মধ্যে টেনে নিলেন। এরপর ফাতিমা এলেন এবং পয়গম্বর তাঁকে ঢেকে নিলেন এবং তারপর আলি এলেন এবং চাদরের মধ্যে ঢুকে গেলেন। তারপর তিনি এই স্তবকটি উচ্চারণ করলেন:

    “قَالَ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمْ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا”

    “হে [পয়গম্বরের] পরিবারবর্গ, আল্লাহ্ যথার্থই চান তোমাদের মধ্যে থেকে সব অশুদ্ধতা [পাপের] মুছে দিতে, এবং তোমাদের [সর্বব্যাপী]পরিশুদ্ধতা দিয়ে বিশুদ্ধ করতে।”

  • মুবাহালা স্তবকের সঙ্গে (সুরাত আল ইমরান, স্তবক 61) সহি মুসলিম পয়গম্বরের সঙ্গীদের গুণাবলীর বিষয়ে সাদ ইব্ন আবি ভাকাসের একটি হাদিস উল্লেখ করে:

    لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا و َأَبْنَاءَكُمْ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ عَلِيًّا وَ فَاطِمَةَ وَ حَسَنًا وَ حُسَيْنًا فَقَالَ اللَّهُمَّ هَؤُلَاءِ أَهْلِي

    (صحيح مسلم الحديث رقم 2404)

    এই স্তবকে “فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا و َأَبْنَاءَكُمْ” (বাংলা: এসো আমরা আমাদের সন্তানদের আমন্ত্রণ জানাই এবং তোমরা আমন্ত্রণ জানাও তোমাদের সন্তানদের। ) পয়গম্বর মহম্মদ (সা।) আলি, ফাতিমা, হাসান ও হুসেনকে ডেকে পাঠিয়েছেন এবং বলেছেন: “হে আল্লাহ্! এরাই আমার আহ্ল আল-বায়াত।”

  • পরিশুদ্ধতা বিষয়ক স্তবকের সম্বন্ধে (সুরা আহ্জাবের স্তবক 33) তিরমিধি তাঁর নিজস্ব প্রমাণ দিয়ে বলেছেন:

    مَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمْ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا فِي بَيْتِ أُمِّ سَلَمَةَ فَدَعَا فَاطِمَةَ وَ حَسَنًا وَ حُسَيْنًا فَجَلَّلَهُمْ بِكِسَاءٍ وَ عَلِيٌّ خَلْفَ ظَهْرِهِ فَجَلَّلَهُ بِكِسَاءٍ ثُمَّ قَالَ اللَّهُمَّ هَؤُلَاءِ أَهْلُ بَيْتِي فَأَذْهِبْ عَنْهُمْ الرِّجْسَ وَ طَهِّرْهُمْ تَطْهِيرًا قَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ وَ أَنَا مَعَهُمْ يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَالَ أَنْتِ عَلَى مَكَانِكِ وَ أَنْتِ عَلَى خَيْرٍ

    (سنن الترمذي الحديث رقم 3205)

    যখন এই স্তবকটি “إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمْ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا” (বাংলা: “আল্লাহ্ যথার্থই তোমার পরিবার থেকে যা কিছু অশুভ এবং কলঙ্কময় তা দূর করতে চান এবং তিনি তোমাদের সকলকে সম্পূর্ণ শুদ্ধ করতে চান”) পয়গম্বর মহম্মদের (সা।) কাছে নেমে আসে, তিনি তখন উম-সালামার বাড়ীতে ছিলেন। তখন তিনি ফাতিমা, হাসান এবং হুসেনকে ডেকে পাঠান এবং তাঁদের চাদরের মধ্যে টেনে নেন। তারপর তিনি তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা আলিকে তাঁর চাদরের মধ্যে ডেকে নেন। এরপর তিনি বলেন: “হে আল্লাহ্! এরাই আমার আহ্ল আল-বায়াত। তাই এদের তুমি সব অশুভ ও কদর্যতা থেকে মুক্ত কর এবং ওদের শুদ্ধ ও শুচি কর।” তখন উম-সালামা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন: “হে আল্লাহ্-এর দূত! আমি কি ওদের একজন?” পয়গম্বর তখন উত্তর দেন: “তোমার নিজের স্থান আছে এবং তুমি ধার্মিকতা ও সদ্গুণের সঙ্গে বাঁচবে (কিন্তু তুমি এই গোষ্ঠীর অংশ নও)।”

  • তাঁর নিজস্ব প্রমাণের ভিত্তিতে তিরমিধি আনাস ইব্ন মালিকের উল্লেখ করেছেন:

    أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ كَانَ يَمُرُّ بِبَابِ فَاطِمَةَ سِتَّةَ أَشْهُرٍ إِذَا خَرَجَ إِلَى صَلَاةِ الْفَجْرِ يَقُولُ الصَّلَاةَ يَا أَهْلَ الْبَيْتِ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمْ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

    (سنن الترمذي الحديث رقم 3206)

    ছয়মাস ধরে, পয়গম্বর মহম্মদ (সা।) প্রতিদিন সকালের প্রার্থনার জন্য মসজিদে যাবার আগে ফাতিমার বাড়ীর দরজায় উপস্থিত হতেন, এবং বলতেন: “ও আহ্ল আল-বায়াত! প্রার্থনার সময় হয়ে গেছে” (তারপর তিনি কোরাণের এই স্তবকটি পাঠ করতেন:)

    ِانَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمْ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

    (বাংলা: হে [পয়গম্বরের] পরিবারবর্গ, আল্লাহ্ যথার্থই চান তোমাদের মধ্যে থেকে সব অশুদ্ধতা [পাপের] মুছে দিতে, এবং তোমাদের [সর্বব্যাপী]পরিশুদ্ধতা দিয়ে বিশুদ্ধ করতে।).

সুতরাং, পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াত নিশ্চিতভাবেই নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ। উপরিউক্ত ব্যাখ্যার ভিত্তিতে বলা যায়, পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াত নিঃসন্দেহে তাঁরাই যাঁরা মুবাহালার ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন অথবা তাঁর পাশে ছিলেন (সুরাত আল ইমরানের স্তবক 61)। তাঁরা হলেন: আলি, ফাতিমা, হাসান এবং হুসেন।

পয়গম্বরের এত্রাত কারা?

কোনো ব্যক্তির স্বজন হলেন তাঁর বিশেষ আত্মীয় এবং পরিবারবর্গ, আর তাই “এত্রাত” (আরবী: عترت) বলতে তাঁর সকল আত্মীয়কে বোঝায় না। পয়গম্বর (সা।) বহুবার থাকালাইনের উল্লেখ করেছেন এবং তাঁর আহ্ল আল-বায়াতকে কোরাণের সমতুল্য বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন যে এই দুই মহামূল্যবান দ্রব্য শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত অবিচ্ছেদ্দ্যভাবে বেঁচে থাকবে। এইসকল বিবরণ গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ধারিত তথ্য উন্মোচন করে যা বিচারের দাবী রাখে। একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যেহেতু শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত কোরাণ উপস্থিত থাকবে, সেহেতু পয়গম্বরের পরিবারের একজন সদস্য ও আহ্ল আল-বায়াতকেও কোরাণের সঙ্গে থাকতে হবে এবং এই দুই প্রতিষ্ঠানের কোনো একটির অনুপস্থিতি পয়গম্বরের বাণীর বিলোপ সূচিত করে। তাছাড়াও, এই দুই দ্রব্যের কোনো একটিরও পালনে অক্ষম হলে তা ক্ষতি ও বিচ্যুতির সূচনা করবে।

অনেক সুন্নী বিজ্ঞানী এবং গবেষক মনে করেন যে পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াতের মধ্যে রয়েছেন আলি, ফাতিমা এবং ফাতিমার সন্তানেরা। ইব্ন হাজার, তাঁর বইতে, একজন অন্যতম মহান হাদিস ও শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত হিসাবে আবু বক্রের উল্লেখ করেছেন, যাঁর কথায় আলি হলেন পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। ইব্ন হাজার লিখেছেন: “তাঁরাই হবেন পয়গম্বরের স্বজন যাঁদের শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত মান্য করা যাবে এবং তাঁরা জগৎবাসীর সুরক্ষা ও উদ্ধার নিশ্চিত করবেন। সেই অর্থে তাঁরা কোরাণের সমতুল্য, আর তাই পয়গম্বর মহম্মদ (সা।) সকল মুসলমানকে তাঁর আহ্ল আল-বায়াত মান্য করার আদেশ দিয়েছেন।”

এখন সুনিশ্চিত করার সময় এসেছে যে কে পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াতের সদস্য এবং তাঁর স্বজন যিনি বর্তমান যুগে বেঁচে রয়েছেন।

হাদিস আল-থাকালাইনে পয়গম্বরের বাণী গুরুত্বের সঙ্গে ও সুনির্দিষ্টভাবে সকল মুসলমানকে ইঙ্গিত দেয় যে তাদের সকলকে পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াতকে জানতে হবে, আর তাই সেই ভবিষ্যৎবাণী যেখানে বলা হয়েছে “এই দুটি অবিচ্ছেদ্দ্য” (لن یفترقا), তা কোরাণ ও পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াতের বন্ধনের বিষয়ে প্রযোজ্য। এখন সময় এসেছে পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াতের সদস্য এবং তাঁর স্বজনকে বর্তমান যুগে খুঁজে বের করার। যেকোনো যুক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি পয়গম্বরের বাণী, বিশেষত সিহা সিত্তা থেকে অনুধাবন করতে পারেন যে পয়গম্বরের আশীর্বাদধন্য সেই ব্যক্তি তাঁর আহ্ল আল-বায়াতের সদস্য ও তাঁর স্বজন। কিছু সুন্নী পন্ডিত দাবী করেন যে, হাদিস আল-থালাকাইনে উল্লিখিত পয়গম্বরের আহ্ল আল বায়াত এবং স্বজন হলেন তাঁর বংশের বারোজন ইমাম এবং তাঁর বারোজন খলিফা। এই সম্বন্ধীয় হাদিস নীচে বিবৃত করা হল।

বিভিন্ন বিবৃতিতে পয়গম্বর মহম্মদ (সা।) মাহ্দিকে তাঁর আহ্ল আল-বায়াতের একজন সদস্য এবং তাঁর স্বজন বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি তাঁকে কোরাণের সমতুল্য ও একজন বিশুদ্ধ ব্যক্তি হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ, পয়গম্বর মহম্মদের (সা।) আশীর্বাদধন্য ব্যক্তির অস্তিত্ব মানবজাতির কাছে প্রমাণিত এবং পৃথিবী কখনোই তাঁর স্বজন ও আহ্ল আল-বায়াত এবং পবিত্র কোরাণ বিহীন হয়ে পড়বে না।

সুনান আল-তিরমিধিতে লেখক আল্লাহ্-এর দূতের উল্লেখ করে বলেছেন:

لَا تَذْهَبُ الدُّنْيَا حَتَّى يَمْلِكَ الْعَرَبَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي

(سنن الترمذي الحديث رقم 2230)

যতদিন না আমার সমনামধারী কোনো ব্যক্তি, যিনি আমার আহ্ল আল-বায়াতের সদস্য, আরবদের শাসন করবেন, ততদিন পৃথিবীর অন্ত হবে না।

আবি সইদ খেদ্রী, সুনান আবু দাউদে, পয়গম্বরের (সা।) উল্লেখ করে বলেছেন:

الْمَهْدِيُّ مِنِّي

(سنن أبي داود الحديث رقم 4285)

মাহ্দি আমার অংশ।

সুনান আবু দাউদে, লেখক উম-সালামার উল্লেখ করেছেন যিনি বলেছিলেন যে পয়গম্বর (সা।) বিবৃত করেছেন:

الْمَهْدِيُّ مِنْ عِتْرَتِي مِن ْوَلَدِ فَاطِمَةَ

(سنن أبي داود الحديث رقم 4284)

মাহ্দি আমার স্বজনদের একজন এবং ফাতিমার বংশধর।

সুনান ইব্ন মাজাহ্ -এর লেখক বলেন:

الْمَهْدِيُّ مِن ْوَلَدِ فَاطِمَةَ

(سنن ابن ماجه الحديث رقم 4086)

মাহ্দি হলেন ফাতিমার বংশধরদের একজন।

উপরিউক্ত হাদিস অনুসারে, কোরাণ এবং পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াতকে কখনোই পৃথক করা যাবে না এবং একটি ছাড়া অন্যটির অস্তিত্ব থাকবে না। এও দেখা গেছে যে মাহ্দি হলেন ফাতিমার বংশধরদের একজন এবং পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াত ও স্বজন। তিনি যথার্থই কোরাণের সমতুল্য থাকালাইনের একজন, আর তাই মাহ্দি ও কোরাণকে মান্য করলে সম্মান ও মুক্তি লাভ হবে।

বারোজন খলিফার বিষয়ে হাদিস

সিহা সিত্তা (ছটি প্রামাণ্য বই) ও অন্যান্য বিশ্বস্ত ও বৈধ সুন্নী গ্রন্থাদিতে বহু ব্যবহৃত ও প্রামাণ্য হাদিসগুলির একটি হল বারোজন খলিফার (উত্তরাধিকারী) বিষয়ে হাদিস। বহু পন্ডিত পয়গম্বরের (সা।) এই বাণীর উল্লেখ করেছেন এবং নিঃসন্দেহে পয়গম্বর মহম্মদই (সা।) এই বার্তার প্রবক্তা।

সিহা সিত্তায় বর্ণিত পাঠ্য

তাঁর নিজস্ব প্রমাণের ভিত্তিতে বোখারী, জাবের ইব্ন সামারের উল্লেখ করেছেন, যিনি বলেছেন যে পয়গম্বর (সা।) একদা বলেছিলেন:

سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ سَمُرَةَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ يَكُونُ اثْنَا عَشَرَ أَمِيرًا فَقَالَ كَلِمَةً لَمْ أَسْمَعْهَا فَقَالَ أَبِى إِنَّهُ قَالَ كُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ

(صحيح البخاري الحديث رقم 6796)

“বারোজন আমির (রাজপুত্র) আসবেন.” এরপর তিনি (পয়গম্বর) কিছু বলেন যা আমি শুনতে পাইনি, কিন্তু আমার পিতা বলেন: “এবং পয়গম্বর বলেন যে তাঁরা সকলে কুরেশ উপজাতি থেকে আসবেন।”

সহি মুসলিমের লেখকও লিখেছেন:

عن جَابِرِ بن سَمُرَةَ قال: دَخَلْتُ مع أبي على النبي صلى الله عليه وسلم فَسَمِعْتُهُ يقول: إِنَّ هذا الْأَمْرَ لَا يَنْقَضِي حتى يَمْضِيَ فِيهِمْ اثْنَا عَشَرَ خَلِيفَةً. قال: ثُمَّ تَكَلَّمَ بِكَلَامٍ خَفِيَ عَلَيَّ قال: فقلت لِأَبِي: ما قال؟ قال: كلهم من قُرَيْشٍ

(صحيح مسلم الحديث رقم 1821)

জাবের ইব্ন সামারে বলেন: আমি আমার পিতার সঙ্গে পয়গম্বর মহম্মদের কাছে আসি। আমরা তাঁকে বলতে শুনি: “যতদিন না বারোজন উত্তরাধিকারী মুসলমানদের শাসন করছেন ততদিন ইসলাম ধর্মীয় খলিফার শাসনকাল শেষ হবে না।”. তারপর তিনি আরো কিছু বলেন যা আমি শুনতে পাইনি। আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করি: “পয়গম্বর কি বললেন?” আমার পিতা উত্তর দেন: “উনি বললেন: এই খলিফারা সবাই কুরেশ জাতির।”

নিম্নলিখিত হাদিসটি হল আরেকটি উদাহরণ:

عن عَامِرِ بن سَعْدِ بن أبي وَقَّاصٍ قال كَتَبْتُ إلى جَابِرِ بن سَمُرَةَ مع غُلَامِي نَافِعٍ أَنْ أَخْبِرْنِي بِشَيْءٍ سَمِعْتَهُ من رسول اللَّهِ صلي الله عليه وآله قال فَكَتَبَ إلي سمعت رَسُولَ اللَّهِ صلي الله عليه وآله يوم جُمُعَةٍ عَشِيَّةَ رُجِمَ الْأَسْلَمِيُّ يقول: لَا يَزَالُ الدِّينُ قَائِمًا حتى تَقُومَ السَّاعَةُ أو يَكُونَ عَلَيْكُمْ اثْنَا عَشَرَ خَلِيفَةً كلهم من قُرَيْشٍ

(صحيح مسلم الحديث رقم 1822)

আমের ইব্ন সাদ ইব্ন আবি ভাকাস বলেন: আল্লাহ্-এর দূতের (সা।) কাছে তিনি কি শুনেছিলেন্ তা জানতে চেয়ে আমি এবং আমার দাস, জাবের ইব্ন সামারেকে চিঠি লিখেছিলাম। জাবের লিখেছিলেন যে শুক্রবার রাতে যখন আসলামিকে পাথর মারা হচ্ছিল তখন তিনি পয়গম্বর মহম্মদকে বলতে শোনেন: এই ধর্ম শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত সুদৃঢ় থাকবে এবং তোমরা বারোজন খলিফা পাবে যারা সকলেই কুরেশ জাতির।

সিহা সিত্তায় বারোজন খলিফা সম্পর্কিত হাদিসের সংগ্রহ থেকে নীচের তথ্যগুলি অনুধাবন করা যায়:

  • আল্লাহ্-এর দূতের (সা।) পরবর্তীকালে খলিফার শাসনকাল বারোজন শাসক অবধি সীমাবদ্ধ।
  • তাঁরা সকলেই পয়গম্বরের জাতি, কুরেশ থেকে আসবেন।
  • ইসলামের সম্মান এবং ধর্মীয় গরিমা এই বারোজন খলিফার অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল। অন্যভাবে বললে, যতদিন এই খলিফাদের একজন জীবিত থাকবেন ততদিন ইসলাম ধর্ম সুদৃঢ় এবং শক্তিশালী থাকবে।
  • যতদিন বারোজন খলিফার শাসনকাল চলবে ততদিন ইসলামের অস্তিত্বের বিনাশ ঘটবে না।
  • এই বার্তা থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুমান করা যায় যে খলিফার শাসনকাল হবে ধারাবাহিক এবং নিরবচ্ছিন্ন। “খলিফা” শব্দের ব্যবহার এই অনুমানের সপক্ষে যুক্তি দেয়। শব্দকোষে খলিফা শব্দটির সংজ্ঞা হল: একজন মানুষ তার নিজের জাতির লোকেদের মধ্যে খলিফা হয়। নিজের কর্তব্য পালনের জন্য তাঁর উত্থান হয়। খলিফা হলেন, তাঁর পূর্বপুরুষের অনুপস্থিতিতে বা তাঁর মৃত্যুর পর বা তিনি শাসনে অক্ষম হলে তখন, তাঁর উত্তরাধিকারী।

বারোজন খলিফার প্রকাশ

এই কথাটি পরিষ্কার যে পয়গম্বরের উত্তরাধিকারী (খলিফা) হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আত্মশুদ্ধি ও সহজাত পবিত্রতার প্রতিভূ, যিনি ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করেন, ভালো উপদেশ দেন এবং অন্যায় নিষেধ করেন। কেউ যদি নিজেকে আল্লাহ্-এর দূতের (সা।) খলিফা বলে দাবী করেন, কিন্তু তাঁর ব্যবহার ও কাজে অন্যায়, দুরাচার ও দুর্নীতি প্রকাশ পায় তাহলে সেই ব্যক্তি পয়গম্বরের উত্তরাধিকারী হতে পারেন না বরং তিনি শয়তানের খলিফা, কারণ পয়গম্বরের খলিফার মধ্যে স্বয়ং পয়গম্বরেরই প্রকাশ ঘটা জরুরী।

সুন্নীদের মধ্যে পয়গম্বরের বারোজন উত্তরাধিকারীদের বিষয়ে অসংখ্য ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে, যার মধ্যে কিছু খারাপ ও অচল। সেরকম দুটি ব্যাখ্যা নীচে দেওয়া হল:

a) এই ব্যাখ্যাটিতে বারোজন খলিফা বলতে বোঝানো হয়েছে আবু বক্র, উমর, ওথমান, আলি, মুয়াউইয়াহ্, ইয়াজিদ ইব্ন মুয়াউইয়াহ্, মুয়াউইয়াহ্ ইব্ন ইয়াজিদ, মারওয়ান ইব্ন হাকাম, আব্দ আল-মালিক ইব্ন মারওয়ান, ওয়ালিদ ইব্ন আব্দ আল-মালিক, সুলেমান ইব্ন আব্দ আল-মালিক এবং উমর ইব্ন আব্দ আল-আজিজকে।

আগেই বলা হয়েছে যে, এইসকল ব্যাখ্যায় “খলিফা” বলতে বোঝানো হয়েছে পয়গম্বরের উত্তরাধিকারীকে। সেক্ষেত্রে এটা কি মেনে নেওয়া সম্ভব যে পয়গম্বরের খলিফারা বাস্তব জীবনে তাঁদের ব্যবহার ও কাজের মধ্যে দিয়ে আল্লাহ্-এর বই এবং পয়গম্বরের জীবন ও ঐতিহ্যের বৈপরীত্য প্রকাশ করেন? তাছাড়া, তাঁর দৈববাণীতে, পয়গম্বর (সা।) নিশ্চিতভাবে বলে গেছেন যে এই বারোজন উত্তরাধিকারী ইসলাম ধর্মের সম্মান এবং মুসলমানদের বিশুদ্ধতা রক্ষা করবেন। উপরিউক্ত ব্যক্তিরা কি সেরকম আচরণ করেছিলেন? ইয়াজিদ ইব্ন মুয়াউইয়াহ্ ও তাঁর মত ব্যক্তিদের আচরণ কি এই হাদিস মেনে চলে? বলা হয়ে থাকে যে, কোনো ব্যক্তি একবার উমর ইব্ন আব্দ আল-আজিজের (দ্বিতীয় উমর) সামনে ইয়াজিদ ইব্ন মুয়াউইয়াহ্-এর প্রশংসা ও গুণগান করেছিলেন। তাতে উমর ইব্ন আব্দ আল-আজিজ প্রচন্ড রেগে গিয়ে সেই ব্যক্তিকে তখুনি 20 বার চাবুক মারার আদেশ দেন।

পয়গম্বরের প্রিয় পৌত্র ও তাঁর নয়নের মণি, হুসেন ইব্ন আলিকে ইয়াজিদ হত্যা করেছিলেন। ইয়াজিদ ছিলেন একজন পানাসক্ত পাপী। তাঁর চার বছরের শাসনকালে তিনি যে অন্যায় করেছিলেন তারপরেও কি ইয়াজিদ ইব্ন মুয়াউইয়াহ্কে পয়গম্বরের বারোজন খলিফার একজন বলা উচিৎ হবে? আল-সুয়িউতি , “খলিফাদের ইতিহাসে” খলিফাদের করা এমন কিছু গুরুতর অপরাধ ও পাপের বর্ণনা করেছেন, যাতে যেকোনো মুসলমান তাঁদের মুসলমানদের খলিফা বিবেচনা করতে লজ্জা পাবেন।

তাই, এখানে এই ব্যাখ্যার দুর্বলতা প্রমাণিত হয়।

b) বারোজন খলিফার হাদিসের আরেকটি ব্যাখ্যা আছে, যেখানে বলা হয়েছে যে খলিফারা যে পরপর শাসন করবেন, তা নাও হতে পারে। খলিফাদের মধ্যে চারজন হলেন যাঁরা শুরুতে শাসন করেছেন (আবু বক্র, উমর, ওথমান এবং আলি)। অন্য চারজন খলিফা হলেন হাসান ইব্ন আলি (পয়গম্বরের পৌত্র), মুয়াউইয়াহ্, ইব্ন জুবায়ির এবং উমর ইব্ন আব্দ আল-আজিজ, এবং ভবিষ্যতে বাকী চারজন খলিফার উত্থান ঘটবে যাঁরা শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত শাসন করবেন।

কিন্তু, এই ব্যাখ্যাটিও সঠিক নয় কারণ পয়গম্বর মহম্মদের (সা।) অসংখ্য বাণীতে বারোজন খলিফার পরপর শাসনের কথাই প্রমাণিত হয়েছে। তাই নিঃসন্দেহে এই ব্যাখ্যাটি এবং তার ভিত্তিতে করা অন্য ব্যাখ্যাগুলির অবৈধতাই সিদ্ধ হয়।

কোরাণের সুবিখ্যাত টীকাকার, ইব্ন কাথির, তাঁর বইতে বলেছেন:

و معنی هذاالحدیث البشارة بوجود اثنی عشر خلیفه صالحاً یقیم الحق و تعدل فیهم... والظاهر ان منهم المهدی المبشر به فی الاحادیث الواردة بذکره،

(বাংলা: বারোজন খলিফা বিষয়ক হাদিসগুলির অর্থ করলে তা খলিফাদের পুণ্যবান হিসাবে চিহ্নিত করে, যারা ন্যায়বিচার স্থাপন করবে… এই বারোজন খলিফাদের একজন হলেন “মাহ্দি”, বিভিন্ন বিবৃতিতে যাঁর অস্তিত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।)

এছাড়াও, সুনান আবু দাউদের ব্যাখ্যা “বাজ্ল আল-মাহ্জুদ” -এ লেখক, বারোজন খলিফার বিষয়ে বিভিন্ন বিবৃতি একত্রিত করে বলেছেন:

و آخرهم الامام المهدی و عندی هذا هو الحق

(বাংলা: বারোজন খলিফাদের মধ্যে সর্বশেষ হলেন অবশ্যই ইমাম মাহ্দি, এবং আমি এই প্রতিশ্রুতিকে সর্বৈব সত্য বলে বিবেচনা করি।)

সহি মুসলিমেও বলা হয়েছে যে পয়গম্বর (সা।) একদা বলেছিলেন:

يَكُونُ فِي آخِرِ أُمَّتِي خَلِيفَةٌ يَحْثِي الْمَالَ حَثْيًا لَا يَعُدُّهُ عَدَدًا

(صحيح مسلم الحديث رقم 2913)

আমার অনুসারীদের সময় শেষ হলে একজন খলিফা আসবেন যিনি অগণনীয় ঐশ্বর্য প্রদান করবেন।

উল্লেখ্য যে, এই হাদিসটিতেও “খলিফা” (আরবী: خلیفه) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

অন্যদিকে, শিয়া গোষ্ঠীর বিবৃতিগুলিতে এই বারোজন খলিফাকে শিয়া ইমাম বলে বর্ণনা করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে প্রথম হলেন আলি ইব্ন আবি তালিব, যাঁর পরে আসেন হাসান, হুসেন এবং হুসেনের বংশের নয়জন ইমাম। এই ইমামদের মধ্যে সর্বশেষ হলেন মাহ্দি, আর এই সকল ইমামেরা পরপর শাসন করেছেন। এই বারোজন ইমামের বিষয়ে বিবৃতিগুলির তুলনামূলক আলোচনা করলে এ বিষয়ক বিবৃতির সত্যতা ও অস্তিত্বই প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ, এই অনুসারে খলিফার অস্তিত্ব বারোজন মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

কিছু সুন্নী গবেষকের উক্তিও এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ যাঁরা বলেছেন: বারোজন খলিফা হলেন বারোজন শিয়া ইমাম, যাঁরা পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াত আর তাই উমাইয়াদ শাসকদের পক্ষে এই বারোজন খলিফা হওয়া সম্ভব নয়, কারণ তাঁরা সংখ্যায় বারোর বেশী এবং তাঁদের অনেকেরই অন্যায় ও পাপকাজ সুস্পষ্ট। তাছাড়া, বারোজন খলিফা আব্বাসিদ রাজবংশ থেকে হওয়া সম্ভব নয় আর এই শাসকরা সকলেই আব্বাসিদ বংশোদ্ভূত। সুতরাং, বারোজন খলিফা হলেন পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াতের অন্তর্ভুক্ত ইমামেরা। আলি থেকে এঁদের শুরু এবং মাহ্দিতে শেষ, এবং এঁরা সকলেই ধার্মিক ও ন্যায়সম্পন্ন।

সিহা সিত্তায় মাহ্দি তত্ত্ব বিষয়ক বিশেষ হাদিস
মাহ্দির সম্মান ও উৎস বিষয়ক হাদিস

কোনো জিনিস বোঝার জন্য তার মর্ম, সম্মান এবং উৎস বোঝা জরুরী। সুতরাং, “মাহ্দি”, যিনি রশিদুন খলিফাদের মধ্যে শেষ এবং পয়গম্বর (সা।) দ্বারা বিবৃত, তাঁর মত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিষয়ে বুঝতে হলে, এই মহান ব্যক্তিত্বের সম্মান ও উৎসের বিষয়ে বোঝা জরুরী।

  • মাহ্দি আব্দুল-মুত্তালিবের বংশোদ্ভূত
    সুনান ইব্ন মাজাহ্, তাঁর বইতে আনাস ইব্ন মালিককে উদ্ধৃত করেছেন যিনি আল্লাহ্-এর দূতকে উদ্ধৃত করেন:

    نَحْنُ وَلَدَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ سَادَةُ أَهْلِ الْجَنَّةِ أَنَا و َحَمْزَةُ وَ عَلِيٌّ وَ جَعْفَرٌ و َالْحَسَنُ وَ الْحُسَيْنُ وَ الْمَهْدِيُّ

    (سنن ابن ماجه الحديث رقم 4087)

    আমরা আব্দুল-মুত্তালিবের বংশধর: আমি, হামজাহ্, আলি, জাফার, হাসান, হুসেন এবং মাহ্দি।

    এই হাদিসটি প্রমাণ করে যে মাহ্দি আব্দুল-মুত্তালিবের (পয়গম্বরের পিতামহ) একজন বংশধর।

  • মাহ্দি পয়গম্বরের বংশোদ্ভূত
    আবু সইদ খেদ্রী পয়গম্বর মহম্মদকে (সা।) উদ্ধৃত করে বলেছেন:

    الْمَهْدِيُّ مِنِّي أَجْلَى الْجَبْهَةِ أَقْنَى الْأَنْفِ يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا وَ عَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَ ظُلْمًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ

    (سنن أبي داود الحديث رقم 4285)

    মাহ্দি আমার অংশ। তাঁর একটি উজ্জ্বল, চওড়া ললাট ও লম্বা নাক আছে। তিনি সারা পৃথিবীতে ন্যায়বিচার স্থাপন করবেন কারণ তাঁর আসার আগে পৃথিবী পাপ ও দুর্নীতিতে ভরে যাবে। তিনি সাত বছর পৃথিবীকে শাসন করবেন।

  • মাহ্দি পয়গম্বরের আহ্ল আল-বায়াতের সদস্য
    সিহা সিত্তায় এই বিষয়ে সুনান আবু দাউদ, সুনান আল-তিরমিধি, সুনান ইব্ন মাজাহ্ সহ বহু বিবরণ রয়েছে। এই সকল বিবরণে পয়গম্বর (সা।) সুস্পষ্টভাবে দাবী করেছেন যে মাহ্দি তাঁর আহ্ল আল-বায়াতের অংশ। এইরকম কিছু বিবরণ সম্পূর্ণ বৈধ ও যথার্থ।
    • আবু দাউদ, আবি আল-তাফিলকে উদ্ধৃত করেছেন যিনি আলিকে উদ্ধৃত করেছেন যে পয়গম্বর (সা।) একদা বলেছিলেন:

      لَوْ لَمْ يَبْقَ مِنْ الدَّهْرِ إِلَّا يَوْمٌ لَبَعَثَ اللَّهُ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يَمْلَؤُهَا عَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا

      (سنن أبي داود الحديث رقم 4283)

      পৃথিবীর বিনাশ যদি আসে, আল্লাহ্ সেদিন আমার আহ্ল আল-বায়াত থেকে একজন মানুষকে পাঠাবেন। তিনি পৃথিবীতে, যেখানে নিপীড়ন ও দুর্নীতিতে ভরে গেছে্, সেখানে ন্যায়বিচার স্থাপন করবেন।

    • সুনান আল-তিরমিধিতে লেখক আসেমকে উদ্ধৃত করেছেন, যিনি জারকে উদ্ধৃত করেছেন, জার উদ্ধৃত করেছেন আব্দুল্লা ইব্ন মাসুদকে, যিনি পয়গম্বরকে (সা।) উদ্ধৃত করেছেন:

      لَا تَذْهَبُ الدُّنْيَا حَتَّى يَمْلِكَ الْعَرَبَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي

      (سنن الترمذي الحديث رقم 2230)

      যতদিন না আমার সমনামধারী কেউ আমার আহ্ল আল-বায়াত থেকে এসে আরবদের শাসন করবে ততদিন পৃথিবীর বিনাশ ঘটবে না।

    • অন্য আরেকটি নথির ভিত্তিতে, আল-তিরমিধিতে আসেমকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, যিনি জারকে উদ্ধৃত করেছেন, জার উদ্ধৃত করেছেন আব্দুল্লা ইব্ন মাসুদকে, যিনি পয়গম্বরকে (সা।) উদ্ধৃত করেছেন:

      يَلِي رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي

      (سنن الترمذي الحديث رقم 2231)

      আমার সমনামধারী একজন মানুষ আমার আহ্ল আল-বায়াত থেকে আসবে।

    • তাঁর সুনানে, ইব্ন মাজাহ্, মহম্মদ ইব্ন আল-হানিফাকে উদ্ধৃত করেছেন, যিনি উদ্ধৃত করেছেন আলিকে, আলি উদ্ধৃত করেছেন পয়গম্বরকে (সা।):

      الْمَهْدِيُّ مِنَّا أَهْلَ الْبَيْتِ يُصْلِحُهُ اللَّهُ فِي لَيْلَةٍ

      (سنن ابن ماجه الحديث رقم 4085)

      মাহ্দি আমার আহ্ল আল-বায়াতের অংশ। আল্লাহ্ তাঁকে এক রাতের মধ্যে উপযুক্ত করে তুলবেন।

    • ইব্ন মাজাহ্ তাঁর সুনানে লিখেছেন:

      عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ و َسَلَّمَ إِذْ أَقْبَلَ فِتْيَةٌ مِنْ بَنِي هَاشِمٍ فَلَمَّا رَآهُمْ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ اغْرَوْرَقَتْ عَيْنَاهُ وَ تَغَيَّرَ لَوْنُهُ قَالَ فَقُلْتُ مَا نَزَالُ نَرَى فِي وَجْهِكَ شَيْئًا نَكْرَهُهُ فَقَالَ إِنَّا أَهْلُ بَيْتٍ اخْتَارَ اللَّهُ لَنَا الْآخِرَةَ عَلَى الدُّنْيَا و َإِنَّ أَهْلَ بَيْتِي سَيَلْقَوْنَ بَعْدِي بَلَاءً وَ تَشْرِيدًا وَ تَطْرِيدًا حَتَّى يَأْتِيَ قَوْمٌ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَعَهُمْ رَايَاتٌ سُودٌ فَيَسْأَلُونَ الْخَيْرَ فَلَا يُعْطَوْنَهُ فَيُقَاتِلُونَ فَيُنْصَرُونَ فَيُعْطَوْنَ مَا سَأَلُوا فَلَا يَقْبَلُونَهُ حَتَّى يَدْفَعُوهَا إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي فَيَمْلَؤُهَا قِسْطًا كَمَا مَلَئُوهَا جَوْرًا فَمَنْ أَدْرَكَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَلْيَأْتِهِمْ وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الثَّلْجِ

      (سنن ابن ماجه الحديث رقم 4082)

      আব্দুল্লাহ্ বর্ণনা করেছেন যে যখন আমরা আল্লাহ্-এর দূতের (সা।) সামনে বসেছিলাম, একদল বানু হাশিম যুবক সামনে দিয়ে চলে যায়। তাদের দেখে পয়গম্বরের (সা।) চোখ জলে ভরে ওঠে এবং মুখমন্ডল ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আমরা বললাম: “হে পয়গম্বর! আমরা আপনাকে কখনো শোক দুঃখে দেখতে চাই না। ” পয়গম্বর উত্তর দেনঃ “আমরাই সেই পরিবার, সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ যাদের উপরে এর পরবর্তী পৃথিবীর ভার ন্যস্ত করেছেন। আমার মৃত্যুর পর আমার আহ্ল আল-বায়াত দুর্দশা ও স্থানচ্যুতির সম্মুখীন হবে এবং নির্বাসিত হবে। এই অবস্থা চলতে থাকবে যতদিন না তারা পূর্বদিক থেকে পুণ্যের সন্ধানে কালো পতাকা নিয়ে আসবে, কিন্তু তারা তা পাবে না। তখন তারা এর জন্য যুদ্ধ করবে এবং সাহায্যপ্রাপ্ত হবে এবং অবশেষে তারা যা চায় তা পাবে। কিন্তু, তখন তারা তা গ্রহণ করতে পারবে না যতক্ষণ না তারা আমার আহ্ল আল-বায়াতের অন্তর্ভুক্ত কোনো মানুষকে সব দায়িত্ব অর্পন করছে। তিনি অত্যাচার ও দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ পৃথিবীতে ন্যায়বিচার নিয়ে আসবেন। তাই তখন তোমরা যারা জীবিত থাকবে তাদের সকলকে তাঁদের কাছে ছুটে যেতে হবে যদি তার জন্য তোমাদের বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয়, তাহলেও।”

  • মাহ্দি ফাতিমার বংশধরদের একজন

    সিহা সিত্তার বিবরণগুলি প্রমাণ করে যে মাহ্দি ফাতিমার বংশধরদের একজন।

    • সুনান ইব্ন মাজাহ্তে লেখক, সইদ ইব্ন মোসায়েবকে উদ্ধৃত করেছেন, যিনি উম-সালামা, পয়গম্বরের স্ত্রীকে, উদ্ধৃত করেছেন যে পয়গম্বর (সা।) একদা বলেছিলেন:

      الْمَهْدِيُّ مِنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ

      (سنن ابن ماجه الحديث رقم 4086)

      মাহ্দি হলেন ফাতিমার বংশধর।

    • সুনান আবু দাউদে লেখক, সইদ ইব্ন মোসায়েবকে উদ্ধৃত করেছেন, যিনি উম-সালামাকে উদ্ধৃত করেছেন যে পয়গম্বর মহম্মদ (সা।) একদা বলেছিলেন:

      الْمَهْدِيُّ مِنْ عِتْرَتِي مِنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ

      (سنن أبي داود الحديث رقم 4284)

      মাহ্দি আমার বংশোদ্ভূত এবং ফাতিমার উত্তরসূরীদের একজন।

পয়গম্বর (সা।) এবং মাহ্দির নামের সাদৃশ্যের বিষয়ে হাদিস

সুনান আল-তিরমিধিতে, তিরমিধি, আব্দুল্লাহ্ ইব্ন মাসুদকে উদ্ধৃত করে বলেছেন যে পয়গম্বর (সা।) একদা বলেছিলেন:

لَا تَذْهَبُ الدُّنْيَا حَتَّى يَمْلِكَ الْعَرَبَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي

(سنن الترمذي الحديث رقم 2230)

যতদিন না আমার সমনামধারী কেউ আমার আহ্ল আল-বায়াত থেকে এসে আরবদের শাসন করবে ততদিন পৃথিবীর বিনাশ ঘটবে না।

অন্য আরেকটি নথির ভিত্তিতে, তিরমিধি জারকে উদ্ধৃত করেছেন, যিনি উদ্ধৃত করেছেন আব্দুল্লাহ্ ইব্ন মাসুদকে, যিনি আল্লাহ্-এর দূতকে উদ্ধৃত করেছেন:

يَلِي رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي

(سنن الترمذي الحديث رقم 2231)

আমার সমনামধারী একজন মানুষ আমার আহ্ল আল-বায়াত থেকে আসবে।

সুতরাং, এমন হাদিস রয়েছে যা ইঙ্গিত করে যে মাহ্দির নাম ও পয়গম্বরের পবিত্র নাম, “মহম্মদ” একই।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
  • সুনান আল-তিরমিধি:

    عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ خَشِينَا أَنْ يَكُونَ بَعْدَ نَبِيِّنَا حَدَثٌ فَسَأَلْنَا نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنَّ فِي أُمَّتِي الْمَهْدِيَّ يَخْرُجُ يَعِيشُ خَمْسًا أَوْ سَبْعًا أَوْ تِسْعًا زَيْدٌ الشَّاكُّ قَالَ قُلْنَا وَمَا ذَاكَ قَالَ سِنِينَ قَالَ فَيَجِيءُ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَيَقُولُ يَا مَهْدِيُّ أَعْطِنِي أَعْطِنِي قَالَ فَيَحْثِي لَهُ فِي ثَوْبِهِ مَا اسْتَطَاعَ أَنْ يَحْمِلَهُ

    (سنن الترمذي الحديث رقم 2232)

    আবু সইদ খেদ্রী (পয়গম্বরের একজন সঙ্গী), বলেন: পয়গম্বরের মৃত্যুর পরে ঘটতে পারা দুর্ঘটনাগুলির ভয়ে আমরা তাঁকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করতাম। পয়গম্বর বলেছিলেন: “আমার জাতির মধ্যে থেকে মাহ্দির উত্থান ঘটবে। তিনি পাঁচ, সাত বা নয় বছর বাঁচবেন। ” – এ বিষয়ে একমাত্র সন্দেহের অবকাশ আছে হাদিসটির বর্ণনকারী জাইদের বিষয়ে। বর্ণনকারীর কাছে মাহ্দির নির্দিষ্ট জীবনকাল ও তাঁর ব্যক্তিত্বের বিষয়ে সত্যতা জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন যে মাহ্দি বহু বছর বাঁচবেন। আল্লাহ্-এর দূত এরপর বলেন যে তাঁর কাছে কেউ এসে বলবেন: “হে মাহ্দি! আমাকে প্রদান কর।” আর তিনি তাঁকে প্রচুর সোনা ও রূপা দেবেন, যতটা তিনি বইতে পারবেন।

  • সহি মুসলিমে লেখক, জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ্কে উদ্ধৃত করেছেন, যিনি পয়গম্বরকে উদ্ধৃত করেছেন:

    لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِينَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ قَالَ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا فَيَقُولُ لَا إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ تَكْرِمَةَ اللَّهِ هَذِهِ الْأُمَّةَ

    (صحيح مسلم الحديث رقم 156)

    আমার জাতির মধ্যে একটি গোষ্ঠী সত্যের জন্য নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত, যখন ইসা ইব্ন মরিয়মকে (পয়গম্বর যীশু) পৃথিবীতে পাঠানো হবে এবং সেই ধর্মবিশ্বাসী গোষ্ঠীর শাসক ইসাকে বলবেন: “আমাদের সঙ্গে প্রার্থনা করুন (দয়া করে আমাদের প্রার্থনার ইমাম হন)”। তখন ইসা উত্তর দেবেন: “না! তোমাদের মধ্যেই একজন অন্য সকলের চেয়ে উন্নত কারণ এই জাতির প্রতি শ্রদ্ধাই আল্লাহ্-এর ইচ্ছা।”

এই পরের হাদিসটির একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে নিম্নোক্ত তথ্যগুলি বেরিয়ে আসে:

  • যখন পয়গম্বর যীশু (সা।) পৃথিবীতে ফিরে আসবেন, তখন একজন মুসলমান ব্যক্তির হাতে জাতির শাসনভার থাকবে।
  • সেই মুসলমান শাসক পয়গম্বর যীশুকে (সা।) তাঁদের প্রার্থনার ইমাম হবার অনুরোধ জানাবেন, এই তথ্যটি সেই শাসকের ধর্মবিশ্বাস এবং সত্যনিষ্ঠতাই প্রমাণ করে। তাই, এই বক্তব্যে “মাহ্দি” শব্দটির স্পষ্ট উল্লেখ না থাকলেও এই ব্যক্তির মধ্যে “মাহ্দি”-এর (অর্থাৎ নির্দেশিত আত্মা) সব গুণগুলি প্রতীয়মান।
  • যীশুর সেই মুসলমান শাসককে অনুসরণ করা এবং নেতৃত্ব গ্রহণের অনুরোধ সত্ত্বেও তা গ্রহণ না করা পয়গম্বর যীশুর (সা।) তুলনায় সেই শাসকের উৎকর্ষেরই প্রমাণ, কারণ একজন নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে উৎকৃষ্ট ব্যক্তির উপরে স্থাপন করা উচিৎ নয়।
  • এই বিবরণগুলিতে “শাসক” শব্দটি (আরবী: امیر) ব্যবহৃত হয়েছে, যা একমাত্র মাহ্দি নামক ব্যক্তিকেই নির্দেশ করে।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে মাহ্দি, যিনি ইসলামের উত্তরাধিকারী এবং পথপ্রদর্শক, তাঁকে সাহায্য করার জন্য শেষদিনে পয়গম্বর যীশুকে (সা।) পৃথিবীতে পাঠানো হবে, । যীশু পৃথিবীর খ্রীষ্টানদেরকে, মাহ্দি এবং ইসলামে আমন্ত্রণ জানাবেন এবং দুটি জগৎকে সংযুক্ত করবেন। তাই, উপস্থিত জনতার সামনে, পয়গম্বর যীশু (সা।) ইমামাহ্ (নেতৃত্ব) মাহ্দির হাতে তুলে দেবেন এবং তাঁর অনুগামী হবেন।